কক্সবাজারে ‘গবেষণা ভিত্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ চাই

পাহাড়, নদী ও সাগরে বেষ্টিত প্রকৃতির অপরূপ সাজে সাজানো এক মনোমুগ্ধকর শহর আমাদের কক্সবাজার। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই কক্সবাজার বাংলাদেশের জন্য আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত। এই শহরের প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এই দেশে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা অনায়াসে আয় করা সম্ভব। এ জন্য দরকার আমাদের এক দক্ষ মানবগোষ্ঠী। দক্ষ মানবগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন মনোরম পরিবেশে গবেষনা ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভূতাত্ত্বিক, সামুদ্রিক, মৎস্য, প্রাণী, বন ও পরিবেশ রিলেটেড বিষয়গুলো নিয়ে যারা পড়ালেখা করে তাদের জন্য গবেষণার চমৎকার স্থান হলো আমাদের কক্সবাজার।

কক্সবাজারের প্রধান দ্বীপসমূহঃ মহেশখালী,
কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ
(নারিকলে জিঞ্জিরা), মাতারবাড়ি।
কক্সবাজারের প্রধান নদীসমূহঃ মাতামুহুরি,
বাকখালী, রেজু খাল, নাফ নদী, মহেশখালী প্রণালী এবং কুতুবদিয়া প্রণালী।

প্রধান বনসমূহঃ ফুলছড়ি রেঞ্জ, ভূমারিয়া-ঘোনা
রেঞ্জ, মেহের-ঘোনা রেঞ্জ, বাক খালি রেঞ্জ।
প্রাকৃতিক সম্পদঃ কক্সবাজার সদরের নাজিরটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকতের বালিতে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি দামের অন্তত ১৭ লাখ ৪০ হাজার টন খনিজ পদার্থ মজুত রয়েছে।

বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের (বিএইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সৈকত বালিতে মোট খনিজের প্রাক্কলিত মজুতের পরিমাণ ৪৪ লাখ (৪

দশমিক ৪ মিলিয়ন) টন। প্রকৃত সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন (এক দশমিক ৭৫ মিলিয়ন)। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে উচ্চ চাহিদাধর্মী মজুত

আকরিক রফতানি করতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে
মূল্যবান খনিজ বালি জিরকন, ইলমেনাইট,
ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও রুটাইল উত্তোলন করা যেতে পারে।

অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী কখনো প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও যত্ন নিতে পারে না। তাই এই শহরের জনগণকে শিক্ষিত হওয়া অতি প্রয়োজন। অথচ পরিসংখ্যান বলে, কক্সবাজারের শিক্ষার হার নয় স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৩৯%। ভাবা যায়, কক্সবাজারের মানুষ শিক্ষা দীক্ষার দিক দিয়ে কতটা পিছিয়ে…!

কক্সবাজারের জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লক্ষাধিক। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৯৫০ জন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী কক্সবাজারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১টি, মেডিকেল কলেজ রয়েছে ১টি, স্নাতকোত্তর কলেজ ২ টি, কামিল মাদ্রাসা ৪ টি, ডিগ্রি কলেজ ১১টি, ফাজিল মাদ্রাসা ১২ টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ১৯ টি, আলিম মাদ্রাসা ১৯টি, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৪০ টি, দাখিল মাদ্রাসা ১০৪ টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০১টি।

জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখলেই সহজে বুঝা যায়, জনসংখ্যার তুলনায় উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নগণ্য।

এই এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি জমাতে হয় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে।

এখানকার শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী, তাই যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত তারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ পদে দায়িত্বরত আছেন। প্রতি বছর শতশত মেধাবী শিক্ষার্থী (বিশেষ করে মেয়েরা) দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও পড়তে যেতে পারে না একমাত্র দূরত্ব, থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। এভাবে শতশত মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ডুবে যায় নীল সাগরের স্রোতে।

কক্সবাজার তথা দক্ষিণাঞ্চলের জনগোষ্ঠী শিক্ষার
দিক থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে। শিক্ষার হার
বাড়ানোর জন্য এখানে প্রয়োজন আরো অনেক
প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। উচ্চ শিক্ষার জন্য এখানে নেই কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এত বড় একটা জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে যদি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের কক্সবাজারে যদি বিশ্বমানের গবেষণা ভিত্তিক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যায় স্থাপনের পদক্ষেপ নেয় তাহলে এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে যাবে এবং জনসম্পদে পরিণত হবে।

নিবেদক ◑
© রোমানা ইয়াছমিন পুতুল ✍
? শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ